0
0
No products in the cart.

জাপানিদের চোখে বাঙলি বীর - ড. নূরুন নবী

৳350.00 ৳400.00

লেখক পরিচিতি

ড. নূরুন নবী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাণরসায়ন বিষয়ে বিএসসি (অনার্স) এবং এমএসসি, জাপানের ওসাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পােস্ট গ্রাজুয়েট ডিপ্লোমা, কিউশু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচ-ডি, আমেরিকার নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে পােস্ট ডক্টোরাল। '৭০ দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং প্রথম সিনেটের সদস্য। ১৯৮০ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস। পেশায় গবেষক-বিজ্ঞানী, বর্তমানে একটি বহুজাতিক কোম্পানির শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানী হিসেবে অবসর গ্রহণ করেছেন। ড. নূরুন নবীর পেটেন্টকৃত আবিষ্কারের বর্তমান সংখ্যা ৫৫। বিজ্ঞানের পেশাদারী জার্নালে এ যাবৎ তাঁর ৫০টি গবেষণা-নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ফজলুল হক হল শাখার সভাপতি (১৯৬৭-৭১), মুক্তিসংগ্রামের দিনগুলিতে নিবেদিতপ্রাণ ছাত্রকর্মী, ১৯৭১-এর বীর মুক্তিযােদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধের কিংবদন্তি টাঙ্গাইলের বাঘা সিদ্দিকীর ঘনিষ্ঠ ও বিশ্বস্ত সহযােদ্ধা, ফারইস্টার্ন ইকোনমিক রিভিউ বর্ণিত টাঙ্গাইল মুক্তিবাহিনীর ‘ব্রেইন’, মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য প্রধান সেনাপতি কর্তৃক প্রদত্ত ‘স্পেশাল সাইটেশন প্রাপ্ত এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক গ্রন্থ লেখক হিসেবে বাংলাদেশ সরকারের একুশে পদকপ্রাপ্ত ।

(Available)
Quantity

SKU: JCBB

Categories: Dr. Nuran Nabi, Books & Office

Tags: Dr. Nuran Nabi

ভূমিকা
ঔপনিবেশিক শক্তি কখনো স্বপ্রণোদিত হয়ে দখলদারিত্ব ছাড়েনি। আন্দোলনের মুখেই দখলদারিত্ব ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। দখলকৃত ভারতের বেলায়ও এর ব্যত্যয় হয়নি। প্রথমে ভারতীয় একটি গোষ্ঠী মৃদু ভাষায় নিম্ন কণ্ঠে ঔপনিবেশিক শক্তি ব্রিটিশরাজের কাছে ভারতীয়দের জন্য কিছু সুযোগ সুবিধার জন্য আবেদন করে। স্বাভাবিক কারণেই সে আবেদনকে অবজ্ঞা করা হয়। তারপর আর একটি গোষ্ঠী একটু উচ্চস্বরে শান্তিপূর্ণ অসহযোগ আন্দোলনের মাধ্যমে ব্রিটিশরাজকে ভারত ছাড়তে অনুরোধ করে। যথারীতি সে আবেদনও উপেক্ষিত হয়।
এমতাবস্থায় ভারতের একদল বিপ্লবী সশস্ত্র আন্দোলনের মাধ্যমে ব্রিটিশদের তাড়িয়ে ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের একমাত্র পন্থা হিসেবে মনে করে। এই বিপ্লবীদের মধ্যে বাঙালি বিপ্লবীরা ছিল সংখ্যাগরিষ্ঠ। বাংলা হয়ে ওঠে ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু। এইসব বাঙালি বিপ্লবী বীর ভারতে অবস্থিত ব্রিটিশরাজের প্রতিনিধি ও তাদের ভারতীয় দালালদের হত্যা করতে শুরু করে, এমনকি ব্রিটিশরাজের অস্ত্রাগারও লুট করে। বাঙালি বিপ্লবীদের এইসব সশস্ত্র আক্রমণে ব্রিটিশরাজ বিব্রতবোধ করে এবং ভীতগ্রস্ত হয়ে ঔপনিবেশিক ব্রিটিশরাজের রাজধানী কোলকাতা থেকে দিল্লিতে স্থানান্তরিত করে।
কিন্তু দিল্লিতে রাজধানী স্থানান্তরিতে করেও বাঙালি বিপ্লবীদের রোষানল থেকে ব্রিটিশরাজ রেহাই পায়নি। এই রাজধানী স্থানান্তরিত উপলক্ষে ১৯১২ সালের ২৩ ডিসেম্বর দিল্লিতে এক আড়ম্বরপূর্ণ ও জাঁকজমক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সে অনুষ্ঠানে উপস্থিত কিং জর্জ পঞ্চম ও ভারতের গভর্নর জেনারেলে লর্ড হার্ডিঞ্জকে হত্যা করতে বোমা নিক্ষেপ করা হয়। বোমাটি লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ায় কিং জর্জ পঞ্চম বেঁচে যায়, কিন্তু লর্ড হার্ডিঞ্জ নিজে বিস্ফোরণে গুরুতর আহত হয়েছিল, তার পিঠ ঝলসে গিয়েছিল। তবে তার একজন সহকারী নিহত হয়েছিল।
এই আক্রমণের পরিকল্পনাকারী ছিলেন বাঙালি বিপ্লবী বীর রাসবিহারী বোস। এর পর তিনি ১৯১৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি লাহোরে ষড়যন্ত্র নামে খ্যাত ব্রিটিশ বিরোধী প্যান-ইন্ডিয়া অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা করেন। কয়েকজন ভারতীয়ের বিশ্বাসঘাতকতার জন্য সে অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়। কিন্তু রাসবিহারীর দিল্লি বোমা হামলা এবং লাহোরে ষড়যন্ত্র পরিকল্পনার জন্য ভারতে ব্রিটিশরাজের ভিত কেঁপে যায়। রাসবিহারী বোস জাপানে নির্বাসনে যান এবং জাপানিদের সহায়তায় ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স লীগ ও ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মি গড়ে তোলেন। পরবর্তীকালে বাঙালি বিপ্লবী বীর নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস জাপানে গিয়ে ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেন্স লীগ ও ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল আর্মির নেতৃত্ব গ্রহণ করেন এবং স্বাধীন ভারত সরকার গঠন করে ব্রিটিশ এবং আমেরিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেন। এইভাবে জাপানিদের সাথে ব্রিটিশবিরোধী ভারতের বাঙালি বিপ্লবীদের সাথে সক্রিয় যোগাযোগ স্থাপিত হয়।  জাপানের সাথে অবিভক্ত বাংলার সাহিত্য ও সংস্কৃতির যোগাযোগ স্থাপিত হয় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের মাধ্যমে। জাপানিদের আমন্ত্রণে রবীন্দ্রনাথ ১৯১৬ সালে প্রথম জাপান সফর করেন। এরপর তিনি আরও চারবার জাপানে গিয়েছিলেন। এই ভাবেই অবিভক্ত বাংলার সাথে জাপানিদের নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সেই সম্পর্কের ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশের সাথে জাপানিদের সম্পর্ক আরও মজবুত হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় জাপানিরা বাংলাদেশের সমর্থনে অর্থনৈতিক এবং কূটনৈতিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। ভারতের স্বাধীনতার জন্য হাজার হাজার বাঙালি বিপ্লবীগণ চরম ত্যাগ স্বীকার করেছেন। তাঁরা জেল, জুলুম, নির্বাসন সহ্য করেছেন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন। তাঁদের ত্যাগের জন্যেই ব্রিটিশরাজ ভারত ছাড়তে বাধ্য হয়েছিল। অসহযোগ আন্দোলনের জন্য নয়। কিন্তু ক্ষুদিরাম, সূর্যসেন, প্রফুল্ল চাকী, বিনয়, বাদল, দীনেশ ও বাঘা যতীনদের মতো হাজার হাজার শহিদ, জেল, জুলুম এবং নির্বাসনে যাওয়া হাজার হাজার বাঙালি বিপ্লবীদের কি স্বাধীন ভারতে যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়েছে, স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে? দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে জাপানিরা পরাজয় বরণ করে। আমেরিকা জাপান দখল করে এবং আন্তর্জাতিক বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠন করে যুদ্ধকালীন জাপানি নেতাদেরকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে বিচার করে জেল ও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এই ট্রাইব্যুনালের একমাত্র ভারতীয় বাঙালি বিচারপতি রাধাবিনোদ পাল বিভিন্ন দেশের অপর ১০ জন বিচারপতির বিরুদ্ধে ভিন্নমত পোষণকারী রায়ে বলেন, সব আসামি অপরাধী নয়, এবং যদি জাপানি আসামিরা অপরাধী হয়, তা হলে জাপানে আণবিক বোমা নিক্ষেপের জন্যে আমেরিকাও যুদ্ধাপরাধী। বিচারপতি পালের এই ঐতিহাসিক ভিন্নমত পোষণকারী রায় জাপানিদেরকে স্বস্তি দিয়েছিল। অপমানবোধ এবং দায়বোধ হাল্কা করতে সাহায্য করেছিল। বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অসাধারণ ও সাহসিক নেতৃত্ব দেখে জাপানিরা মুগ্ধ হয়েছিল। তাঁরা বঙ্গবন্ধুকে মহানায়ক হিসেবে শ্রদ্ধা করত। তাঁকে হত্যা করায় জাপানিদের বাঙালদেশিদের প্রতি বিরূপ প্রতিক্রিয়া হয়েছিল। আমরা জাপানে অবস্থানকালে পাঁচ বাঙালি বীরের প্রতি জাপানিদের অফুরন্ত শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা দেখতে পেয়েছিলাম। তাঁরা হলেন বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বিপ্লবী নেতাজি সুভাষচন্দ্র বোস, কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিপ্লবী রাসবিহারী বোস এবং বিচারপতি রাধাবিনোদ পাল। এই পাঁচ তারকা বাঙালিদেরকে জাপানিরা অতিমানব হিসেবে শ্রদ্ধা করে। তাঁদের প্রতি কেন জাপানিদের এই সশ্রদ্ধ মনোভাব সেই আখ্যান এই গ্রন্থের পরবর্তী অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এই গ্রন্থটি রচনা করতে আমাকে নানাভাবে সাহায্য করেছেন আমার জীবনসঙ্গিনী ড. জিনাত নবী। বইটি ধারবাহিকভাবে সাপ্তাহিক বাঙালিতে প্রকাশ করেছেন সাপ্তাহিক বাঙালির সম্পাদক কৌশিক আহমেদ এবং বইটি প্রকাশ করেছেন অনন্যা প্রকাশনীর কর্ণধার মনিরুল হক। আমি এই তিন জনকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

ড. নূরুন নবী, মুক্তিযোদ্ধা
একুশে পদকপ্রাপ্ত লেখক
নিউ জার্সি, আমেরিকা

0.00

5 Star
0%
4 Star
0%
3 Star
0%
2 Star
0%
1 Star
0%

Submit Your Review

Please login to write review!

Upload photos
You can upload up to 6 photos, each photo maximum size is 2048 kilobytes

Related products

0